গাড়ী রিভার্স গিয়ারে দিয়ে সাশা পেছানোর চেষ্টা করলো কয়েকবার। এঞ্জিন গোঙিয়ে উঠছে তবু পেছাচ্ছে না। চাকা কাদায় ডেবে গেছে মনে হয়। এমনিতে রাস্তাটা সামনে ঢালু, উল্টো দিকে উঠতে আরো বেশী শক্তি লাগবে। সাশা হাল ছেড়ে বললো, নেমে ধাক্কা দেয়া ছাড়া উপায় নেই। এদিকে অন্ধকারে আরো কয়েকজোড়া জ্বলজ্বলে চোখ দেখতে পাচ্ছি। গানা বললো, ইম্পসিবল, এ অবস্থায় দরজা খোলা যাবে না। ক্যানেডিয়ান রকিজে নেকড়ের অনেক দুর্নাম। আমি বললাম, এগুলো কায়োটীও হতে পারে, অত ভয়ের কিছু নেই। মহাঝামেলা এত রাতে। হাইওয়ে সিক্সটিনের এ জায়গায় কোন সেলফোন কানেকশনও নেই যে পুলিশ ডেকে সাহায্য চাইবো। এখন হয় সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি না হলে নীচে ঢাল বরাবর যদি চালানো যায় কোথাও গিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে আসতে পারি।
শেষে নীচের দিকে যাওয়াই ঠিক হলো। গাড়ী থেকে বের হওয়া উচিত হবে না। ওরাও আমার মত বিদেশী, মেয়েগুলো বিশেষ করে বেশ ভয় পাচ্ছে। একটু চেষ্টা করতে চাকা ঘুরে গাড়ী মুক্ত হয়ে গেল। এত চাপা গ্রাভেল রোড, ইউ টার্ন নেয়ার মত জায়গা পাওয়া মুষ্কিল। আমি ম্যাপটা দেখে বললাম, ইউ না নিলেও চলবে, রাস্তাটা ঘুরে গিয়ে আবার হাইওয়েতে পড়েছে, ম্যাপে আমি যা দেখছি সেটা ঠিক হয়ে থাকলে মাইলখানেক পড়ে এই রাস্তা হাইওয়েতে মিশেছে। সাশা বললো, ওকে, তাহলে সামনে যাই, গাড়ী ঘুরাতে গিয়ে কাদায় আটকে যেতে চাইছি না।
একমাইল যেতে কয়েকমিনিট লাগা উচিত বড় জোর, কিন্তু আধা ঘন্টা পরও রাস্তার দেখা নেই। নিকষ অন্ধকার। ফার গাছের সারিতে অল্প অল্প করে আকাশ দেখা যায়। ঢাল বেয়ে নেমে মনে হচ্ছে একটা ভ্যালীতে চলে এসেছি, ঘন কুয়াশা এখানে। সাশা গাড়ী থামিয়ে বললো, কি করব তাহলে। আমি বললাম, স্যরি আমি ম্যাপে যে রাস্তা ভেবেছি এটা সে রাস্তা নয়, আর সামনে না গিয়ে উল্টো ঘোরাই ভালো হবে। সবাই চুপচাপ হয়ে রইলাম। সাশা নীরবতা ভেঙে বললো, আচ্ছা তাহলে ঘুরাচ্ছি। ও খুব সাবধানে অল্প সামনে পেছনে গিয়ে গাড়ী ঘোরানো শুরু করল। রাস্তাটা এত চাপা আড়াআড়ি গাড়ীটা রাখাই যাচ্ছে না। তখনই ঘটলো বিপত্তি বিকট শব্দে পেছনের টায়ার ফেটে গেল। গ্রাভেল রোডে চালানোর জন্য বোধ হয়। এখন তো আর গাড়ী নড়তে পারছে না। এবার সবাই ভয় পেয়ে গেছে। সত্যি সত্যি বিপদে পড়ে গেছি। কানাডার এই অংশে জনবসতি খুব কম। আমরা যেখানে আছি এর ত্রিশ চল্লিশ কিলোমিটারের মধ্যে কেউ আছে বলে মনে হয় না। গানা বললো, লেটস নট প্যানিক, সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করি। হাইওয়ে খুব দুরে না, ফাটা টায়ারেও চালিয়ে যাওয়া যাবে। রাতে আর কোন ঝুকি নেয়ার দরকার নেই।
কিছুক্ষন কথা বলে সবাই বুঝলাম, সকাল পর্যন্ত চুপচাপ থাকা উচিত হবে। সামান্য ঝামেলা অনেক বড় করে ফেলেছি এর মধ্যেই। সাশা ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে একটা বিয়ারের ক্যান খুললো। আমার ব্যাগ থেকে চাদরটা বের করে মেয়েদের দিলাম। ওরা সবচেয়ে কম প্রিপারেশনে এসেছে। জুজকা বললো, তাকে মুততে হবে। এই রাতে সে বাইরে যেতে পারবে না। দরজাটা একটু খুলে করা যেতে পারে সেটাও ভয় পাচ্ছে। অনেক ভেবে চিন্তে একটা বিয়ার ক্যান নিয়ে ঝিরঝির করে মুতে দিল জুজকা। সে রাতে বিয়ার ক্যান গুলো সবাইকে বেশ কাজে দিল।
ভোরে গাড়ী থেকে নেমে দেখলাম চাকাটা ফেটে মাটিতে গেথে গেছে। আধাঘন্টা পাচজনে ঠেলাঠেলি করে গাড়ীটাকে ঘুরাতে পারলাম। বিপদের সেই শেষ ভাবলাম। নুড়ি পাথরের গ্রাভেল রোডে মাইলখানেক যেতে যেতে ফাটা চাকার পুরো টায়ার খুলে মেটাল বেরিয়ে পড়লো। উতরাই রাস্তায় গাড়ী একদিকে ট্র*্যাকশনের অভাব আরেক দিকে বারবার কাত হয়ে ঘুরে যাচ্ছিল। একটা খাড়া জায়গায় গিয়ে গ্যাস প্যাডালে শত চাপ দিয়েও গাড়ীটা উঠতে পারলো না। সাশা বললো, ইটস ডান, গাড়ী এখানেই ডাম্প করে যেতে হবে। গাড়ী থেকে নেমে পড়লাম সবাই। ছেড়াখোড়া চাকাটা দেখে বুঝলাম এই গাড়ী নিয়ে হাইওয়েতে আসলেই যাওয়া যাবে না। এখন একমাত্র উপায় এই পাচছয় মাইল রাস্তা হেটে গিয়ে হাইওয়েতে সাহায্য চাওয়া। গভীর ফরেস্টে সুনশান নীরবতা। আমাদের দেশে এরকম জঙ্গল হলে পাখীর কিচির মিচির শোনা যেত। এখানে সেসব নেই। খুব আমফরগিভেন জায়গা। কালকের স্যান্ডউইচের বাকি অংশটুকু খেয়ে নিচ্ছিলাম, মারিয়া বললো, একজাক্টলী কত দুরে হবে রাস্তা? আমি বললাম, আমরা বড় জোর আধঘন্টা চালিয়েছি, চল্লিশ কিমি স্পীড হলে আসছে বিশ কিমি দুরে। সবাই হকচকিয়ে উঠলো, বিশ কিমি উতরাই হাটতে হবে। ইটজ নট গোয়িং টু বি ইজি ম্যান। সাশা বললো। আমি বললাম, এছাড়া উপায় কি?
– ইজ দেয়ার এনি শর্টকাট? আমার মনে হচ্ছে রাস্তাটা কার্ভড হয়ে এসেছে, একটা কাজ করতে পারি, রাস্তা ধরে ঘুর পথে না গিয়ে ভ্যালী ধরে নেমে সামনের হিলটা উঠে দেখতে পারি। আমি অলমোস্ট সার্টেইন হিলটার ওপাশের ঢালে হাইওয়ে। রাতে এরকমই দেখেছিলাম। একদফা বিতর্কের পরে সাশার প্রস্তাবে যাওয়া মনস্থ হলো। যেহেতু দিন প্রায় ষোল ঘন্টা অনেক সময় পাওয়া যাবে। গাড়ীটা লক করে ব্যাকপ্যাক নিয়ে রওনা হলাম।
দিনের আলোয় ভয় কোথায় চলে গেছে। হাসাহাসি করতে করতে ভ্যালীতে নেমে এলাম। ছোট একটা পাহাড়ী নদী। সামারে হলুদ একধরনের ফুলে ভরে আছে। নদীটা সহজে পার হওয়ার রাস্তা খুজছিলাম। এগুলো খুব গভীর থাকে না, তবুও মনে হয় অন্তত বুক সমান পানি হবে কোন কোন জায়গায়। ইস্টার্ন ইউরোপীয়ান গুলোর লজ্জা কম। সাশা শর্টস পড়া ছিল, সেটা খুলে ল্যাংটা হয়ে পানিতে নেমে গেল। নেমেই লাফ দিয়ে উঠে আসল। ভীষন ঠান্ডা পানি। সামারে বরফ গলে নদী হয়েছে, বরফের মতই ঠান্ডা। ও নির্লজ্জভাবে নুনু ঝুলিয়ে হাসতে হাসতে কাছে এসে বললো, এনিবাডি এলস ওয়ান্ এ ট্রাই?
গানা মুখ ভেচকে বললো, আই ক্যান
মারিয়াও বললো, শিওর
মেয়েরা খুব সহজে টপ আর বাইরের প্যান্ট খুলে পা ভিজিয়ে নিল। ব্রা আর প্যান্টি আছে অবশ্য। ওরা চারজন নিজেদের ভাষায় কি যেন বলে হেসে যাচ্ছিল। আমি কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলাম। চমৎকার সকাল। এরকম জায়গায় ক্যাম্পিং এ আসা দরকার। পানির ধারে গিয়ে দেখছিলাম, পাথরের ওপর দিয়ে বেশ কিছুদুর না ভিজে হয়তো যাওয়া যাবে, তবু মনে হচ্ছে কিছুটা নামতেই হবে। হঠাৎ মনে হলো ওরা আমাকে দেখিয়ে কিছু বলছে, আমি ওদের দিকে তাকিয়ে বললাম, হোয়াট? ইউ গাইজ আর এ্যাক্টিং রিয়েলী স্ট্রেঞ্জ, সময় নষ্ট করার মানে কি?
মারিয়া বললো, ইউ নো, আই হ্যাভ নেভার সীন এ ব্রাউন ম্যান নেইকেড। আই হ্যাভ এ ফিলিং আই ওয়ান্ট সী ওয়ান টুডে
সাশা বললো, অফ কোর্স, ওকে চেপে ধরি, আমাদের চারজনের সাথে পারবে না
– আর ইউ আউট অফ ইওর মাইন্ড?
সাশা বললো, মারিয়া গেট হিম