কাকলী বলতে শুরু করল জানেন সেই ঘটনার পুলিশ আর সাংবাদিকদের দয়ায় মা কোমাতে চলে গেছিল। আর বাবাকে তো আমি জন্মের পরই হারাই। মায়ের পছন্দ করা পাত্রের সাথেই বিয়ে করব এরকম ভাবনা ছিল।
কিন্ত বিজয় এত নাছোড়বান্দা ছিল। বুঝতে সময় লাগল যে এটা ভালোবাসা নয়। তারপর এই অবস্থা।কাজের ওখানেও……আমাকে সবাই সস্থা একজন বেশ্যা বলে ভাবছে। যাকে ভোগ করতে পয়সা লাগে না।
বলে সে কেঁদে উঠল।
একটা জিনিস আমি হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছি ভালোবাসা সস্তা জিনিস নয়। এখন এই অবস্থায় পড়ে আমি অনেক কিছু জানতে পেরেছি আর প্রতিনিয়ত অনেক কিছু জানতেও পারছি। বাবার হয় থাকতে হবে অনেক পয়সা আর তা না হলে আমার মত মেয়েরা…..। আমার দুটির কোনটিই নেই। কলঙ্ক যদি গরীবের লাগে তাহলে তার একটিই পথ খোলা থাকে তা হল মরন। জানেন আমি কিন্ত খারাপ মেয়ে নই।
কাকলী মুখে রুমাল চেপে নিজের কান্না চাপল। সেদিন অনুষ্ঠানবাড়ী থেকে ফেরার পথে ও বন্ধুদের নিয়ে এই কাজ…….চোখের জল মুছে সে বলল। হায় মোর ভালোবাসা! জোর করে ভালোবাসা যায় বলুন? এমন একজন যে সব সময় চেয়েছে আমাকে ভোগ করতে। যখন নানা রকম গিফট দিয়ে আমাকে কিনতে পারেনি তখন জোর করে বন্ধুদের নিয়ে ……….. আজ আমি সিদ্বান্ত নিয়ে ফেলেছি।
মিত্রবাবু নিজেকে এতসময় হারিয়ে ফেলেছিলেন।এতক্ষণ পর ওনার হুঁশ এল। সিদ্বান্ত! কি সিদ্বান্ত?
মেয়েটি বলল মরন। উনি বললেন কি বলছ তুমি! নিজেকে শেষ করে দেবে ওই প্রতারকের জন্য। কাকলী বলল দেখুন আপনি প্লিজ উপদেশ দেবেন না।আপনার কাছেও আমি হয়ত এখন বিরক্তিকর বস্তু কিন্ত আপনি আমার চোখে একজন………..সে থেমে গেল।
মোহনবাবু দমে গেলেন। কাকলী সেটা বুঝতে পেরে বলল, আচ্ছা বলুন তো আমার নাম কি?
মোহনবাবু মনে করতে পারলেন না। মেয়েটি যাবার জন্য উঠে দাঁড়াল।
মোহন মিত্র বললেন সে কি চলে যাচ্ছ?
কাকলী বলল হ্যাঁ। আপনার সাথে শেষবারের মত দেখা করতে এসেছিলাম।
উনি বললেন শেষবার! মানে? তুমি কি যা তা বলছ? সমাজের ভয়ে তুমি নিজেকে শেষ করে দিতে চলেছ? তোমার মা কোমাতে রয়েছে।তাকে এই ভাবে ফেলে যেতে তোমার লজ্জা করছে না।
কাকলী বলল এখানে আসার আগে খবর পেলাম মা ও…..হাউ হাঊ করে সে কেঁদে উঠেও থেমে গেল।
মোহন মিত্র তাকে সান্ত্বনা দিতে কাছে যেতেই সে ওনাকে জড়িয়ে ধরল।অল্প সময়ের মধ্যে সে নিজেকে সামলে নিল এবং বলল চলি।কোন জবাবের আশা না করেই সে চলে গেল। উনি কি করবেন ভাবতে ভাবতেই সময় কেটে গেল।
হুঁশ আসতেই তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পড়লেন আর মনে মনে বললেন থানাতে যেতে হবে।
বাইক নিয়ে থানাতে ঢুকতেই এস,আই এর সাথে দেখা হল। তিনি তাকে বললেন পার্ক এর কেসটার কি হল? এরপর কায়দা করে মেয়েটার ঠিকানা বার করে তিনি বেরিয়ে এলেন। খুব তাড়াতাড়ি বাইক চালালেন । কিন্ত সেই ভাড়াবাড়ি গিয়ে তিনি যখন পুলিশের লোক বললেন তখন জানতে পারলেন যে সেই খারাপ মেয়েটিকে আজই বাড়ী ছেড়ে দিতে হত কিন্ত আজ তার মা মারা গেছে তাই দয়াবশত তাকে আজকের দিন সময় দেওয়া হচ্ছে।
তিনি হাসপাতালের ঠিকানা পত্র জোগাড় করে সেইদিকে রওনা দিলেন। সেখানে জানলেন বাড়ির কেউ ক্লেইম করার জন্য আসেনি। নিজে পরিবারের লোক সেজে বিলপত্র ক্লিয়ার করে শশ্মানে নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করে ফেললেন। তিনি আশ্চর্য হলেন কাকলী কোন বিপদ ঘটিয়ে ফেলেনি তো? তিনি তাকে এখন কোথায় খুঁজবেন? ওনার নিজের উপর ভীষণ রাগ হল।
প্রায় ঘণ্টা খানেক খোঁজার পর তিনি দেখলেন ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে কাকলী দাঁড়িয়ে আছে, সামনে একখানি গাড়ি দাঁড়ানো। ওনার বুঝতে বাকি রইল না কি হতে চলেছে। তিনি গাড়ীর সামনে গিয়ে ব্রেক এত জোরে মারলেন। যে গাড়ির সবাই চমকে গেল। কাকলী মুখ ফিরিয়ে একবার ওনাকে দেখেই চোখ নামিয়ে নিল।
তিনি গাড়ীর সবাইকে চলে যেতে বললেন। তারা গাঁইগুই করতেই তার শান্ত কঠিন স্বরের কথাবার্তা শুনে তারা ভয় পেয়ে কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। মোহন মিত্র চাকরী ছেড়েছেন কিন্ত দাপট নন। তার ভয়ে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত এরা তো কোন ছাড়। তিনি এবার কাকলীর দিকে চেয়ে শুধু বললেন বাইকে বসো।
সে কোনকথা না বলে বাইকে বসতেই তাকে নিয়ে সোজা শশ্মানে চলে এলেন।সে অবাক হয়ে গেছিল। সে ওনার নির্দেশ মত কাজ করতে লাগল।সবকিছু হয়ে যাবার পর তিনি সোজা তাকে নিয়ে সেই ভাড়াবাড়িতে গেলেন। আর বললেন।তুমি আজই ঘর ছেড়ে দিচ্ছ।
‘শুধু দরকারি জিনিসপত্র গুলিই নিয়ে এস’ কাকলীকে বললেন।বাড়িওয়ালা অবাক চোখে সব দেখছিলেন। মোহন মিত্র চাবিখানি বাড়িওয়ালার হাতে দিয়ে বললেন আপনার ঘর আজই ছেড়ে দিচ্ছে কাকলী । কাল গাড়ি পাঠিয়ে দেব জিনিসপত্রগুলি নিয়ে যাবার জন্য। কাকলী কে নিয়ে যখন তিনি বাড়ি ফিরলেন তখন রাত প্রায় একটা।
এই এত সময়ের মধ্যে কাকলীর মুখ থেকে কোন আওয়াজ মোহনবাবু শোনেন নি। তিনি শুধু নিজের ঘরখানি খুলে দিয়ে বললেন এখানে শুয়ে পড়। আর আমি প্রচুর ক্লান্ত। তুমি নতুন করে কিছু করে বস না। কাল সকালে কথা হবে।তিনি বসার ঘরে এসে ভিজে জামা কাপড় খুলে তোয়ালে দিয়ে নিজের বলিষ্ট শরীরখানি মুছছিলেন। তখন তিনি শুধু একখানি ভি শেপের জাংগিয়া পড়ে ছিলেন।
একখানি হাল্কা আওয়াজে পিছন ফিরতেই মোহন মিত্র দেখলেন কাকলী একটি ধুতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তিনি ধুতিখানি নিতে নিতে ভালো করে আপাদমস্তক দেখলেন। অজানা এক অনুভুতি ফিরে এল।তিনি শরীর মুছে ধুতিখানি পড়ে নিলেন। কাকলী মুখে কিছু না বললেও তার চোখে তিনি অনেক কিছু দেখতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কিছু বলবে?
সে মাথা নিচু করে বলল আপনি আমাকে দ্বিতীয় বার লজ্জার হাত থেকে বাঁচালেন। না হলে আমি আজ একটি বেশ্যা হয়ে নতুন করে জন্ম নিতাম। মোহন বাবু বললেন যাও শুয়ে পড়। সে চলে গেল।
মোহনবাবু সোফাতে শুয়ে ভাবতে লাগলেন আজ অব্ধি তিনি কি করলেন।নিজের বয়স যদি কিছু কম হত তাহলে এই মেয়েকে নিশ্চিত তার সহধর্মিণী করার প্রস্তাব দিতে পারতেন আর সে না ও করতে পারত না। তার সুন্দর মুখখানি মনে পড়তেই মন এক অজানা সুখে ভরে গেল। তিনি তার কথা ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়লেন।
গভীর রাতে চাপা কান্নার আওয়াজে ওনার ঘুম ভেঙে গেল। তিনি ঘড়িতে দেখলেন ৩টা বাজে। তিনি নিজের বেডরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন। দেখলেন দরজা হাল্কা ভেজানো আছে এবং যথারীতি কাকলী কাদঁছে।
তিনি দরজায় আওয়াজ করে বললেন ভিতরে আসতে পারি? সে কান্না থামিয়ে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিল আর কাপড় চোপড় ঠিক করে বসল। তিনি ঘরের ভিতরে ঢুকলেন। তিনি বলতে শুরু করলেন। দেখ কাকলী তোমার উপর যে ঝড় বয়ে গেছে তা আমি আন্দাজ করতে পারি কিন্ত অনুভব নয়। তবে আমি তোমাকে এটুকু বলতে চাই যে তোমাকে একটি ভাল পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেবার দায়িত্ব এখন আমার।তুমি একটি ভুল করেছ অন্যায় নয়।